উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। ময়মনসিংহের জমিদার কালীনারায়ণ গুপ্ত পড়শি এক মোক্তারের বাসায় বসে কথা বলছেন। পুকুরপাড় দিয়ে এক যুবক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাকে দেখেই মোক্তারমশাই বলে উঠলেন, ‘‘ওই বেটা ব্রহ্মসভায় গান করে।’’ যুবক তথা ব্রহ্মসভা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব দিব্যি বোঝা গেল! কিন্তু কালীনারায়ণ যে মোক্ষের সন্ধানে ব্যাকুল। মোক্তারের ওই বাঁকা মন্তব্যই তাঁকে পথ দেখাল। তিনি ওই যুবককে জিজ্ঞাসা করে জানলেন, সরকারি ইংরেজি স্কুলের হেডমাস্টার ভগবানচন্দ্র বসু (জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবা) মহাশয়ের বাড়িতে প্রতি বুধবার উপাসনা ও সঙ্গীত হয়। আর ঈশানচন্দ্র বিশ্বাস মাস্টারের বাড়িতে এই বিষয়ে বইপত্র পাওয়া যায়।
অতুলপ্রসাদ সেনের দাদামশাই কালীনারায়ণের জীবনের এই ঘটনাটির উল্লেখ আছে বঙ্কুবিহারী গুপ্তর লেখা তাঁর জীবনীতে। সে আমলে গানই যে ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম অভিজ্ঞান হয়ে উঠেছিল, বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়। কালীনারায়ণ পরে শুধু ব্রাহ্ম সমাজে যোগই দেননি, নিজেও হয়ে উঠেছিলেন ব্রহ্মসঙ্গীতের অন্যতম গীতিকার। তাঁর সৃষ্টি ‘এ গো দরদি’ বা ‘একবার বল বল মন বুলবুল পাখি’র মতো গানেই গ্রামীণ লোকায়ত সংগীতের আঙ্গিক ব্রহ্মসঙ্গীতে প্রবেশ করে। তাঁর প্রেরণায় গান লিখতে এগিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী অন্নদাও।
আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান থেকে সমাজ সংস্কার, মহিলাদের গীতিচর্চা থেকে সাঙ্গীতিক নিরীক্ষার ইতিহাস— একাধারে এই চারটি বিন্দু যেন ছুঁয়ে আছে কালীনারায়ণের এই কাহিনি, যা আসলে সামগ্রিক ভাবে ব্রহ্মসঙ্গীতেরই কাহিনি। ব্রহ্মসঙ্গীতের ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে আধুনিক বাংলা গানের গতিপথটি অনেকাংশে নির্মিত ও নির্ধারিত হয়েছে। ‘আত্মীয় সভা’ প্রতিষ্ঠার পরের বছর, অর্থাৎ ১৮১৬ সালে রামমোহন রায় ‘কে ভুলালো হায়’ বলে প্রথম যে গানটি লেখেন, তার নিরিখে বিচার করলে গত বছরেই ব্রহ্মসঙ্গীতের দ্বিশতবার্ষিকী পেরিয়ে গিয়েছে।
রামমোহন নিজে প্রায় ৩২টি গান লিখেছিলেন। তাঁর সমসাময়িক গীতিকার হিসেবে নীলমণি ঘোষ, কালীনাথ রায়দের নাম পাওয়া যায়। পরবর্তী কালে ব্রহ্মসঙ্গীতের প্রায় এক-চতুর্থাংশ একা রবীন্দ্রনাথই লিখে গিয়েছেন। অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্তের বেশির ভাগ গানও ব্রহ্মসঙ্গীতের অংশ। এ ছাড়া ঠাকুরবাড়ি থেকে দেবেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, গুণেন্দ্রনাথ, সৌদামিনী, স্বর্ণকুমারী, সরলা দেবী, ইন্দিরা দেবী— সকলেই ব্রহ্মসঙ্গীত লিখেছেন।
তার বাইরেও শুধু যে অসংখ্য ব্রহ্মসঙ্গীত আছে তা-ই নয়, ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, কাশীচন্দ্র ঘোষাল, মনোমোহন চক্রবর্তী, পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়, নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র বড়ালের মতো গীতিকারেরা উপযুক্ত প্রচারের অভাবে অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই বাংলা গানের ক্ষেত্রে এক এক জন জ্যোতিষ্কের সম্মান পাওয়ার দাবিদার। যেমন বিবেকানন্দের কণ্ঠে ‘মন চল নিজ নিকেতনে’ গানটির কথা বারবার আলোচিত হয়েছে। কিন্তু গীতিকার অযোধ্যানাথ পাকড়াশীর কথা আলাদা করে সে ভাবে মনে থাকেনি কারও। বিষ্ণুপুর ঘরানার অন্যতম পুরোধা এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতশিক্ষক হিসেবে যদু ভট্টের কথা যত উচ্চারিত হয়েছে, গীতিকার যদু ভট্টের কথা তত নয়।
আবার বহু উদাহরণ এমন রয়েছে, যেখানে তাঁদের অন্যান্য কীর্তির কথা সকলেই জানেন। কিন্তু তাঁরা যে ব্রহ্মসঙ্গীতেরও রচয়িতা, সেটা বিস্মৃতপ্রায়। শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, শশিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্তের নাম এ প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে। বিশেষ করে ‘প্রেমের মন্দিরে তাঁর আরতি বাজে’ বা ‘নমি সত্যসনাতন নিত্যধনে’-র মতো গান শুনলে এক অন্য সুকুমারকে আবিষ্কার করা যায়। একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ দেশে একসঙ্গে এত জন গীতিকারের আবির্ভাব আর ঘটেছে কি না সন্দেহ।
আবার ব্রাহ্ম আন্দোলনের সঙ্গে স্ত্রীশিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নবজাগরণের সম্বন্ধ কারও অজানা নয়। কিন্তু বঙ্গীয় রেনেসাঁসের যুগে মেয়েদের লেখালেখি নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, মেয়েদের গান নিয়ে ততটা আদৌ হয়নি। ইন্দুবালা ঘোষাল, সরোজিনী দত্ত, চঞ্চলা ঘোষ, সুমতিবালা দেবী, অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায়, হেমলতা দেবী, বিধুমুখী দেবী (উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্ত্রী), মাতঙ্গিনী চট্টোপাধ্যায়, সুদেবী মুখোপাধ্যায়— এই নামগুলো তাই চট করে চিনতে পারার কথা নয়। ব্রহ্মসঙ্গীতের ভান্ডারে কিন্তু এঁদের সকলের লেখা গান আছে। সেই সঙ্গে আছে নিরুপমা দেবী, জ্যোতির্ময়ী দেবী, কামিনী রায় এবং ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের লেখা বহু গান। এর বাইরে আর কারা গান লিখেছেন, বা ব্রহ্মসঙ্গীত সঙ্কলনের বাইরে এঁদের অন্য গানও ছিল কি না, জানা কঠিন। বর্তমান লেখক সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রকাশিত সঙ্কলনটির একাদশ (১৯৩১) ও ষষ্ঠদশ (২০১৩) সংস্করণটি দেখার সুযোগ পেয়েছেন। মহিলা গীতিকারদের তালিকা এই দুই সংস্করণের ভিত্তিতেই দেওয়া।
‘জীবনের ঝরাপাতা’য় সরলা দেবী লিখেছেন, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে মাঘোৎসবের দিন যে বিপুল লোকসমাগম হত, গানের টানই তার প্রধান কারণ এবং মেয়েদের গলায় গান শোনার আকর্ষণ তার একটা বড় দিক। সঙ্গীতায়োজনের দিক থেকেও ব্রহ্মসঙ্গীত আধুনিক বাংলা সঙ্গীতচর্চার অন্যতম দিশারি। সরলা লিখছেন, ‘‘১১ই মাঘের সঙ্গীত প্রোগ্রামে প্রতি গানের আরম্ভে সেই গানের রাগ বা রাগিণীর খানিকটা আলাপ মিলিত যন্ত্রে খানিকক্ষণ ধরে করে তারপর গানটি ধরতে লাগলুম... গানের পূর্বে ইংরেজি ধাঁচের এই রকম খানিকটা উপক্রমণিকার দস্তুর... সে সময় বাংলা গানে এটা সম্পূর্ণ নতুন ছিল।’’
বাংলা গানে এমন বহু নতুনত্বের সূত্রপাতই ব্রহ্মসঙ্গীতের হাত ধরে। যেমন ১৮৯১ সালেই ‘পরিচারিকা’ পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা জানাচ্ছে, জগদীশচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি ফোনোগ্রাফ যন্ত্র এনেছেন এবং তাতে কয়েকটি ব্রহ্মসঙ্গীত রেকর্ড করা হয়েছে।
ব্রহ্মসঙ্গীতের এই বিকাশ কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। ব্রহ্মোপাসনায় গানের উপরে রামমোহন প্রথম থেকেই জোর দিচ্ছিলেন। ‘প্রার্থনাপত্র’ (১৮২৩) বইয়ে যাজ্ঞবল্ক্য উদ্ধৃত করে তিনি লিখছেন, ‘‘ঋক, গাথা, পাণিকা ও দক্ষবিহিত গান ব্রহ্ম বিষয়ক। এই সব মোক্ষসাধক গান অভ্যাস করলে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়।’’ ভক্তি আন্দোলনের নমুনা টেনে তিনি বলছেন, ‘‘দশনামা সন্যাসী, গুরু নানক, দাদুপন্থী, কবীরপন্থী, সন্তমতাবলম্বীরা— ভাষাগানাদি তাঁদের উপাসনার উপায় হইয়াছে।’’
ব্রহ্মসঙ্গীতের সেই গোড়ার পর্বটিতে একাধারে তাই গান লেখা হচ্ছিল, সেই সঙ্গে চলছিল উপনিষদের মন্ত্রে সুর সংযোজন। রামমোহনের সামনে এক দিকে তখন সামগানের ঐতিহ্য, ভক্তি আন্দোলনের উদাহরণ। অন্য দিকে গির্জায় খ্রিস্টীয় স্তোত্রগানের সঙ্গে পরিচয়। পাশ্চাত্য ঠাটের সঙ্গে বাংলার ভদ্রলোকি বাতাবরণে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেরও একটা পুনরুজ্জীবন ঘটে যাচ্ছিল এর মধ্য দিয়ে। ব্রাহ্ম সভা গঠনের বছরেই ব্রহ্মসঙ্গীত সঙ্কলন প্রকাশিত হয়, তাতে শতাধিক গান ছিল। রামমোহন ছাড়া তার গীতিকার ছিলেন আরও সাত জন। ১৮৩৩-এ ক্যালকাটা খ্রিস্টান অবজারভার-এ লেখা হল, ‘‘দেশীয় সঙ্গীত হিসেবে ইউরোপীয়রা এত দিন যা শুনে এসেছেন, তার তুলনায় এর গায়কি এবং সঙ্গীত অতি উচ্চ মানের।’’
জনপ্রিয় আঙ্গিককে ব্রহ্মসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত করার শুরুও রামমোহনের হাত ধরেই। কালী মির্জার শিষ্য এবং নিধুবাবুর গুণমুগ্ধ রামমোহন টপ্পার গায়কিকে সানন্দে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের অনুরোধে নিধুবাবু ‘পরম ব্রহ্ম তৎপরাপর পরমেশ্বর’ বলে একটি গানও লেখেন। ১৮৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে তত্ত্ববোধিনী সভা আর ব্রাহ্মসভা মিলে গিয়ে বৃহত্তর ব্রাহ্ম সমাজ-এর জন্ম হল। সেই সঙ্গে রামমোহনের আদর্শ স্মরণ করে মহর্ষি ব্রহ্মসঙ্গীতের ভান্ডারে নিয়ে এলেন সুফি গান, হরিদাস, কবীরের দোঁহা, মীরার ভজন, গুরুবাণী। ব্রহ্মসঙ্গীত তাই শুধু নতুন গানের সম্ভারই নয়, সমমনস্ক গানের সংগ্রাহক আর সংকলকও।
উনিশ শতকের ষাটের দশক থেকে কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহে ব্রহ্মসঙ্গীতে আর এক বিপ্লবের সূচনা হল। কেশব শুরু করলেন নগর সঙ্কীর্তন। তার মানে খোল-করতাল সহযোগে বাংলায় কীর্তনের যে ধারা, ব্রহ্মসঙ্গীত এ বার তার সঙ্গেও নিজেকে মিলিয়ে নিল। আবার কেশবের ভক্তিমার্গে ব্রাহ্ম উপাসনায় ঈশ্বরকে মাতৃরূপে আরাধনার রীতিও শুরু হল। ফলে শাক্ত পদাবলির গানের ধারাটিও এসে মিলল উপাসনার গানে।
১৮৬৮ সালের মাঘোৎসবে কেশবপন্থীদের নগরকীর্তনের সাফল্যের কথা শিবনাথ শাস্ত্রীর লেখায় পাচ্ছি। তিনি লিখছেন, ‘‘উপাসনান্তে আদি সমাজের সিঁড়ি দিয়া নামিয়া আসিতেছি, এমন সময় কয়েক জন বাবু... বলিতে বলিতে আসিতেছেন, ‘মহাশয়, দেখলেন না তো, কেশব শহর মাতিয়ে তুলেছেন।’ তাঁদের কাছেই ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের লেখা ব্রহ্মসঙ্কীর্তন পড়ে শিবনাথের মনে হল, ‘‘এই আহ্বান ধ্বনি আমার প্রাণে বাজিল, আমার যেন মনে হইল আমাকে ডাকিতেছে।’’
পরবর্তী কালে কেশবপন্থীদের সঙ্গে শিবনাথের বিচ্ছেদ হয় ঠিকই, কিন্তু সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ নগর সঙ্কীর্তনকে বাদ দেয়নি। তাঁদের মন্দির প্রতিষ্ঠাও নগর সঙ্কীর্তন করেই হয়েছে। এমনকী শান্তিনিকেতনের মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনেও (২১ ডিসেম্বর ১৮৯১) সকলে গান গাইতে গাইতে মন্দিরে গিয়েছিলেন। গানের দলের পুরোভাগে ছিলেন মহর্ষির স্নেহধন্য শিবনাথ। তত্ত্ববোধিনী-তে সেই বিবরণ বলছে, ‘‘পরদিন প্রত্যূষেই প্রান্তরের নির্জনতা ভঙ্গ করিয়া সঙ্কীর্তন আরম্ভ হইল। ক্রমে মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দিষ্ট সময় আসিয়া পড়িল... বেহালা হইতে আগত কয়েক জন ব্রাহ্মবন্ধু মৃদঙ্গযোগে ‘প্রাণভরে আজ গান কর, ভবে ত্রাণ পাবে আর নাহি ভয়’ গাহিতে গাহিতে অগ্রে চলিলেন।’’
অর্থাৎ রামমোহনের সঙ্গীত-আদর্শ যে ভাবে দেবেন্দ্রনাথের মধ্যে বিস্তার পেয়েছিল, একই ভাবে কেশবের হাত দিয়ে ব্রহ্মসঙ্গীতের যে নতুন ধারা, তা আদি এবং সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মধ্য দিয়েও অনুসৃত হচ্ছে। কীর্তনাঙ্গের গান, বাউলাঙ্গের গান, মাতৃ-আরাধনার গান, আদি ঘরানার ব্রহ্ম-উপাসনা গান— সব ক’টি স্রোতই নিজের মতো করে বহতা থেকে যাচ্ছে। ‘সদা দয়াল দয়াল বলে ডাক’ (ভোলানাথ অধিকারী), ‘হরি হে এই কি তুমি সেই আমার হৃদয়-বিহারী’ (সীতানাথ দত্ত), ‘আমি হব মা তোমার কোলের ছেলে’ (কৈলাসচন্দ্র সেন), ‘বন্দি দেব দয়াময় তব চরণে’ (সুমতিবালা দেবী)— প্রার্থনাসঙ্গীতের এতগুলো ধাঁচ একাত্ম হচ্ছে ব্রহ্মসঙ্গীতের মধ্যে। ব্রাহ্ম পরিবারগুলির মধ্যে সঙ্গীতচর্চা দৈনন্দিনতার অঙ্গ হয়ে উঠছে। পরবর্তী কালেও সাহিত্যে বা সিনেমায় ব্রাহ্ম চরিত্র এলেই এসেছে গান। ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবিতে জবা (অনুভা গুপ্ত) পরদায় আসে একটি ‘ফিল্মি’ ব্রহ্মসঙ্গীত গেয়েই। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গলায় সেই ‘আমি তোমার বীণা’ গানটি লিখেছিলেন কিন্তু ছবির গীতিকার প্রণব রায়ই।
ব্রহ্মসঙ্গীতের অবশ্য এ নিয়ে ছুতমার্গ থাকার কথা নয়। বরং মত ও পথ নির্বিশেষে ব্রহ্মোপাসনার মেজাজের সঙ্গে সঙ্গতি দেখলে সে গান বরাবর ব্রহ্মসঙ্গীতের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। তা সে মীরার ভজন বা কবীরের দোঁহা-ই হোক, তুলসীদাস-রবিদাস-তুকারামের গানই হোক কিংবা নিধুবাবু-দাশরথি রায়-স্বামী বিবেকানন্দ বা কাঙাল হরিনাথের। এমনকী ‘প্রভু জয় জগদীশ হরে’র মতো অতি পরিচিত ভজনও ব্রহ্মসঙ্গীত সঙ্কলনের অন্তর্গত এবং গীত। কবি গিরধর রায়ের লেখা এমন আরও বেশ কিছু গান, যেমন ‘অন্তরযামী মেরা স্বামী’, ‘অব মেরি বেড়ী পার লঙ্ঘা’ সংকলনে রয়েছে। রয়েছে রজ্জব (অঘ মিটৌ অঘ মোচন স্বামী), বজ্রঙ্গবিহারী লাল (আয় দিলরুবায়া দিল কা দিল), জ্ঞানদাস বঘৈলি-র (ফজরমে জব আয়া য়লচী) মতো কবিদের গান।
এটা যে সচেতন ভাবেই করা হয়েছে, তা পরিষ্কার লেখা আছে ব্রহ্মসংগীত সঙ্কলনের একাদশ সংস্করণের (১৯৩১) ভূমিকায়— ‘‘গানের আদির সূচীতে রচয়িতাদিগের নাম দেখিলে বুঝিতে পারা যাইবে, কত বিভিন্ন যুগের কত বিভিন্ন শ্রেণীর ভগবৎ পিপাসু নরনারীর রচনার দ্বারা এই সঙ্গীত পুস্তক পরিপুষ্ট।’’
ব্রহ্মসঙ্গীত তার মানে শুধু বাংলা গান নয়, বাংলার গানও নয়। নানা ভাষায় ব্রহ্মসঙ্গীত লেখা হয়েছে (অসমিয়া, গারো, গুজরাতি, মরাঠি, তেলুগু, ওডিয়া), নানা ভাষা থেকে ব্রহ্মসঙ্গীত আহরিত হয়েছে। ব্রহ্মসঙ্গীতে আলাদা একটি পরিচ্ছেদ আছে শুধু উর্দু গানের জন্য। বিলেতে গিয়ে স্যালভেশন আর্মি-র কাজকর্ম দেখে শিবনাথ শাস্ত্রীর সবটা মোটেই ভাল লাগেনি। লিখেছেন, ‘‘কেবলই যীশু যীশু দেখিতেছি, ঈশ্বরের নাম কোথাওই নাই।’’ কিন্তু ‘মুক্তি ফৌজ’-এর গানের অনুবাদ ‘প্রভু তু মেরা প্যার হ্যায়’ ব্রহ্মসঙ্গীতের তালিকায় আসা তাতে আটকায়নি। আবার একটা সময়ের পরে, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের ব্রহ্মসঙ্গীত সঙ্কলনে দেশাত্মবোধক প্রার্থনাসঙ্গীতের আলাদা পরিচ্ছেদ যুক্ত হয়। ‘জনগণমনঅধিনায়ক’ বা ‘হও ধরমেতে ধীর’-এর মতো গান গোড়া থেকেই সেই তালিকায় ছিল।
ঠিক কত গান লেখা হয়েছিল ব্রহ্মসঙ্গীত হিসেবে? নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ১৮৫১ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ব্রহ্মসঙ্গীতের বইয়ের বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে প্রথম। বারো খণ্ডে সে বই ক্রমে বেরিয়েছিল আদি ব্রাহ্ম সমাজ থেকে।
তার পরেও অজস্র গান লেখা হয়েছে। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের একাদশতম সংকলনে দু’হাজারের বেশি গান ছিল। ষোড়শ সংস্করণে তা কমে দাঁড়িয়েছে বারোশোর কিছু বেশি। ব্রাহ্ম সম্মিলন সমাজের পক্ষ থেকে ব্রহ্মসঙ্গীতের দুশো বছর উদ্যাপনের সূত্রে বেশ কিছু দুর্লভ গান শোনার সুযোগ মিলেছিল। এই বছরই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিশতবার্ষিকী পূর্ণ হওয়ার সময়। বাংলা গানের ইতিহাসে ব্রহ্মসঙ্গীতের ভূমিকা ফিরে দেখার জন্য উপযুক্ত সময়ও হতে পারে এটাই।
I was born in Assissi, spent my childhood in Florence, spent time in Jerusalem and Jeddah and moved to Aix-en-provence. I was a apprentice at the Abbaye Notre-Dame de Senanque for few years before crossing the Atlantic for postgraduate studies in Classical, Medieval and Renaissance studies. In the Nineteenth century and the early 20th century, until the 1950s, Harvard University used to be an elitist conservative, vintage university of New England for Boston brahmins many of whom have their origins in the Puritan times of John Winthrop. They held dearly European values and created a New England out of their own culture that epitomozed John Harvard's Harvard University. However, since the 1960s, Harvard has become over liberalized like the University of California Berkeley, embracing a counter European culture and deconstruction by embracing wholesale multiculturalism and putting in leadership position people of non-western origin who lack western and European values. How and w...
Comments